পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে ভোটার এসআইআর। গত ৪ নভেম্বর থেকে রাজ্য ভোটার এসআইআর ফর্ম বিলি শুরু হয়েছে। প্রতিটি ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে BLO -রা ফর্ম দিয়ে আসছেন। এবার ভোটার এসআইআর ফর্ম জমা নেওয়ার সময় ১৩ দফা নিয়মাবলী জারি করলেন পশ্চিমবঙ্গ মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর।
তাহলে দেখে নিন, কি কি নিয়ম মানতে হবে ভোটার এসআইআর ফর্ম জমা দেওয়ার সময়। এছাড়াও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যদি এখনো কোনো ভোটার এনুমেরেশন ফর্ম না পেয়ে থাকেন তাদের জন্য টোল ফ্রি ও হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার চালু করলেন কমিশন। সেই নাম্বারে কল কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে ভোটারের তথ্য, যেমন – নাম, বিধানসভা নাম, পার্ট নাম্বার, সিরিয়াল নাম্বার লিখে পাঠাতে বলা হয়েছে। আর যোগাযোগ করার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কমিশনের তরফ থেকে।
ভোটার এসআইআর ফর্ম জমা দেওয়ার সময় কি কি নিয়ম কিংবা গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে, একনজরে দেখে নিন –
১) ভোটার এনুমেরেশন ফর্ম কিংবা গণনা ফর্মে ভোটারের নিজের সই কিংবা সই না পেলে বুড়ো আঙ্গুলের টিপ সই দিয়ে জমা করতে হবে।
২) ভোটার SIR ফর্ম পূরণ করতে কোনো ভুল হলে, সেই ভুল লেখাটি একটিমাত্র রেখা দিয়ে কেটে দিতে হবে। এরপর সেই বক্সেই পাশে সঠিক তথ্যটি লিখে দিতে হবে ভোটারদের।
৩) যেসকল ভোটার বাড়িতে নেই, তাদের এনুমেরেশন ফর্মে বাড়ির অভিভাবক অর্থাৎ পরিবারের যে সদস্যের নাম ভোটার লিস্টে রয়েছে, তিনি সিগনেচার কিংবা টিপসই দিতে পারবেন। এর পাশাপাশি স্বাক্ষরকারীর সাথে সেই ব্যক্তির সম্পর্ক কি তা উল্লেখ করে দিতে হবে সেখানে।
৪) প্রত্যেক ভোটারকে দুই কপি করে এসআইআর ফর্ম দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এক কপি BLO সংগ্রহ করবেন ও অপর এক কপি BLO সিগনেচার করে ভোটারের হাতে তুলেন দিবেন। এছাড়া বুথ লেভেল অফিসারকে অর্থাৎ BLO ফর্ম সংগ্রহ করার সময় ভোটারের ফটো তুলে BLO অ্যাপে আপলোড করতে হবে।
৫) ভোটার এসআইআর ফর্মে ফটো লাগানো নিয়ে অনেকের অনেক মত। তবে কমিশনের তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো, ভোটার এসআইআর ফর্মে ফটো লাগানো ঐচ্ছিক অর্থাৎ বাধ্যতামূলেক নয়। ভোটার চাইলে ফটো ফর্মে লাগাতে পারেন কিংবা নাও লাগাতে পারেন। পাসপোর্ট সাইজের যেকোনো ফটো ফর্মে লাগাতে চাইলে লাগাতে পারেন, এটা কোনো বাধ্যতামূলক নয়।
৬) প্রত্যেক ভোটারকে ভোটার এসআইআর অর্থাৎ গণনা ফর্মে সঠিক তথ্য উল্লেখ করে দিতে হবে। কোনো ভুল তথ্য উল্লেখ করা যাবে না।
৭) ভোটার এসআইআর ফর্ম পেয়েছে কিন্তু সেই ভোটার মৃত কিংবা একজন ভোটারের একের অধিক ভোটার কার্ড রয়েছে। এছাড়াও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে। সেই সকল ভোটারদের সঠিক তথ্য বুথ লেভেল অফিসারকে অর্থাৎ BLO – কে দিতে হবে আবেদনকারীকে।
৮) ভোটাদের সাহায্য করার জন্য, যেসকল BLA অর্থাৎ বুথ লেভেল এজেন্ট প্রতিদিন ৫০ টির বেশি করে আবেদনকারীদের এসআইআর ফর্ম BLO অর্থাৎ বুথ লেভেল অফিসারদের কাছে জমা করছেন। সেই সকল বুথ লেভেল এজেন্টদের একটি সাদা কাগজে ঘোষণা পত্র দিতে হবে ও সেখানে সিগনেচার করতে হবে। আর ঘোষণা পত্রে উল্লেখ থাকবে, ফর্মে উল্লেখিত সমস্ত তথ্য সঠিক ও তাঁর উপস্থিতিতে আবেদনকারী ফর্মে সিগনেচার করেছে। আর সেই ঘোষণা পত্রে BLA এর নাম, বিধানসভা নাম, পার্ট নং ফোন নাম্বার, ঠিকানা ও সিরিয়াল নাম্বার উল্লেখ করতে হবে।
৯) যদি কোনো মৃত ভোটারের তথ্য কিংবা স্থায়ীভাবে স্থানান্তরিত ভোটারের তথ্য উল্লেখ করে ভুল এসআইআর ফর্ম পূরণ করে বুথ লেভেল অফিসারের কাছে জমা করে থাকেন। সেই ব্যক্তির জন্য শাস্তি হিসাবে থাকবে অসদাচরণ জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৫০ এর ৩১ ধারা অনুযায়ী এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।
১০) ভোটার এনুমেরেশন ফর্ম কিংবা গণনা ফর্ম যেহেতু ডিজিটাইজ করা হয়েছে। কেউ কোনো ভুল তথ্য দিলে খুব সহজেই আবেদনকারী কিংবা ঘোষণাকারী ব্যক্তিকে খুব সহজেই খুঁজে বের করতে পারবেন কমিশন।
১১) ২৮শে অক্টোবর ২০২৫ তারিখের মধ্যে যাদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে কিন্তু এখনো ভোটার এসআইআর ফর্ম কিংবা গণনা ফর্ম পাননি। সেই সকল ভোটার টোল ফ্রি নম্বর ১৯৫০ এবং ০৩৩-২২৩১-০৮৫০ এই নাম্বারে ফোন করে সমস্ত তথ্য দিতে পারবেন। এছাড়াও চালু করা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার, সেই নাম্বারে ভোটারের নাম, বিধানসভা কেন্দ্রের নাম, পার্ট নম্বর এবং সিরিয়াল নম্বর উল্লেখ করে এই নাম্বারে ৯৮৩০০৭৮২৫০ হোয়াটসঅ্যাপ করতে পারবেন। কিংবা চাইলে ইমেল ceo-election-wb@nic.in এ লিখেও পাঠাতে পারেন, এর ফলে কমিশন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
১২) এনুমেরেশন ফর্ম কিংবা গণনা ফর্ম পূরণ করতে কোনোরকম সমস্যার সম্মুখীন হলে কিংবা কিছু জানার থাকলে ভোটারেরা বুথ লেভেল অফিসার, সুপারভাইজার, AERO, ERO এবং DEO -দের সাহায্য নিতে পারেন। এর পাশাপাশি ভোটাররা টোল ফ্রি ১৯৫০ নাম্বারে ও ০৩৩-২২৩১-০৮৫০ এই নাম্বারে ফোন করে সাহায্য নিতে পারবেন।
১৩) ভোটার এসআইআর ফর্মটি বুথ লেভেল অফিসাররা সঠিকভাবে যাচাই করবেন। এরপর সবকিছু সঠিক ভাবে যাচাই করার পর ফর্মে সই করবেন। যদি কোনো ফর্মের তথ্য যাচাই করার পরও ভুল থেকে যায়, তবে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে সেই বিএলও-কে শাস্তি পেতে হবে।










