২০০১ সালের পর দেশে শেষবার জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে। ২০২১ সালে আবার জনগণনা হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা হয়ে উঠেনি। অবশেষে দীর্ঘ ১৭ বছর পর ফের জনগণনার প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র সরকার।
প্রসঙ্গত, এইবারের জনগণনায় জাতভিত্তিক হিসাবও রাখা হবে । এতদিন পর্যন্ত ভারতে জাতভিত্তিক জনগণনা সাধারণত করা হতো না, শুধুমাত্র তফসিলি জাতি ও উপজাতির ক্ষেত্রেই এই হিসাব রাখা হতো। তবে এবার সমস্ত জাতের বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানায় কেন্দ্রীয় সরকার।
২০১১ সাল থেকে বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা কত সে সম্পর্কিত সঠিক ও নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই সরকারের কাছে। একগুচ্ছ প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত ও আণুষাঙ্গিক অন্যান্য সমস্যা এজন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে, কিন্তু ২০১১ সালের জনগণনার পর জানা গিয়েছিল, ওই সময় জনসংখ্যা ছিল ১২১ কোটির কিছু বেশি। বর্তমানে জনসংখ্যা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনও পর্যন্ত নেই। ২০২১ সালে জনগণনা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি , কেন্দ্রের সরকার জানায় ২০২১ সালে জনগণণা নেওয়া সম্ভব হয়নি করোনা মহামারীর জন্য।
নতুন এই জনগণনার কাজ শুরু হবে ২০২৭ সালে, এবং তার আগে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানান। ১৮৮১ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত প্রতি দশকের জনগণনাতেই জাতভিত্তিক তথ্য নেওয়া হতো। স্বাধীনতার পর ১৯৫১ সাল থেকে কেবল তফসিলি জাতি (SC) ও তফসিলি উপজাতি (ST)-র তথ্য রাখা হতো। বাকি জাতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আর সংগ্রহ করা হয়নি। তবে এবার ২০২৭-এর জনগণনার সেই বন্ধ অধ্যায় আবার খুলতে চলেছ।
সূচিপত্র
- জনগণনা কী? এবং কেন দরকার
- কি কারণে ২০২১ সালে জনগণনা হয়ে উঠেনি
- কীভাবে হবে ২০২৭ সালের জনগণনা?
- কবে প্রথম শুরু হবে এই গণনা?
- জাতি-ভিত্তিক জনগণনা কি আর কেন হচ্ছে?
- জনগণনা কি কি জিজ্ঞেস করতে পারে সেন্সাস স্টাফরা?
- কেন জনগণনা দরকার আর কেউ বাঁধা দিলে কি সমস্যা হতে পারে?
- জনগণনা আসা কর্মীদের নথি চেক করা?
- গুরুত্বপূর্ণ হাইলাইটস
জনগণনা কী? এবং কেন দরকার
জনগণনা মানে শুধু মানুষের সংখ্যা গোনা নয়। এটা সরকারের এক বিশাল কর্মসূচি, যেখানে দেশের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সরকারি কর্মীরা নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেন। যেমন কতজন সদস্য আছেন, বাড়িতে পানীয় জল আছে কিনা, বিদ্যুৎ-শৌচাগারের সুবিধা আছে কিনা, কে কী কাজ করেন, কত আয়, শিক্ষার স্তর, ধর্ম, জাত বা উপজাতি ইত্যাদি।
এভাবে শুধু সংখ্যাই নয়, একটা পরিবারের জীবনযাত্রার অবস্থা, অর্থনীতি, শিক্ষা, পেশা সবকিছু সরকারের কাছে পৌঁছায়। এই তথ্য দিয়েই সরকার ভবিষ্যতের উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করে— কোথায় স্কুল হবে, কোথায় হাসপাতাল দরকার, কোন এলাকায় রেশন বা ঘর প্রকল্প চালু হবে ইত্যাদি।
কি কারণে ২০২১ সালে জনগণনা হয়ে উঠেনি
২০২১ সালের জনশুমারির জন্য ২০১৯ সালেই পরিকল্পনা নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এই পরিকল্পনার সামনে বাধা হিসেবে কাজ করেছে করোনা মহামারি, রাজ্যসরকার নির্বাচন ও প্রযুক্তিগত জটিলতা।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সাল থেকেই বন্ধ করা হয়েছিল স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; ২০২১ সালেও তা অব্যাহত ছিল। এই সময়সীমায় করোনার কয়েকটি বিধ্বংসী ঢেউ মোকাবিলা করতে হয়েছে দেশকে। ফলে ওই বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় জুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ কার্যত অসম্ভব ছিল স্কুলশিক্ষকদের পক্ষে। তাই আর জনগণনা হয়ে ওঠেনি।
কীভাবে হবে ২০২৭ সালের জনগণনা?
২০২৭ সালে জনগণনা হবে দুই ধাপে:
- হাউস লিস্টিং ও হাউজিং (House Listing & Housing Census): সেন্সাস স্টাফরা এই সময়ে ঘরবাড়ি, শৌচাগার, পানীয় জলের উৎস, রান্নার জ্বালানি ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য নেবে আপনার থেকে।
- জনসংখ্যা গণনা (Population Enumeration): ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু, এবং ১ মার্চ ২০২৭ অব্দি, এই ধাপে সেন্সাস স্টাফরা পরিবারের সদস্যসংখ্যা, লিঙ্গ, বয়স, ধর্ম, শিক্ষা, পেশা ও ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করবে।
কবে প্রথম শুরু হবে এই গণনা?
সরকার জানিয়েছে, ২০২৬ সালের ১ অক্টোবর থেকে প্রথম ধাপের গণনা শুরু হবে হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ ও উত্তরাখণ্ডের মতো পাহাড়ি ও তুষারাবৃত অঞ্চলে। দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে ২০২৭ সালের ১ মার্চ থেকে দেশের বাকি অংশে।
জাতি-ভিত্তিক জনগণনা কি আর কেন হচ্ছে?
জাতিভিত্তিক জনগণনা মানে হলো সেন্সাস স্টাফরা প্রতিটি নাগরিকের জাত (caste) সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করবে।
এই তথ্যের মাধ্যমে বোঝা যাবে, কোন জাতির কতজন মানুষ রয়েছে, তারা কী ধরনের শিক্ষা পাচ্ছে, কী রকম পেশায় যুক্ত, স্বাস্থ্য ও আয়ের অবস্থা কেমন, আর সামাজিকভাবে তারা কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে।
স্বাধীনতার পর ভারত সরকার চারটি শ্রেণিতে মানুষকে ভাগ করে: SC, ST, OBC এবং General ক্যাটাগরিতে। SC ও ST এর তথ্য প্রতি গণনায় নেওয়া হলেও, OBC ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট সংখ্যা আজও সরকারি ভাবে নেই।
জনগণনা কি কি জিজ্ঞেস করতে পারে সেন্সাস স্টাফরা?
দেশে দীর্ঘ ১৭ বছর পর ফের শুরু হতে যাচ্ছে জনগণনা। এই বার ১৯৩১ সালের পর প্রথমবার জাতভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ হবে।
জনগণনায় সাধারণত নিচের তথ্যগুলো নেওয়া হয়:
- নাম, বয়স, লিঙ্গ
- ধর্ম, জাতি
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- পেশা ও আয়
- বাসস্থান ও পরিবারের সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি।
কেন জনগণনা দরকার আর কেউ বাঁধা দিলে কি সমস্যা হতে পারে?
সরকার বলেছে, জনগণনা দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা, ভোটার তালিকাসহ পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য জরুরি।
আর কেউ জনগণনায় বাধা দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
জনগণনা আসা কর্মীদের নথি চেক করা?
জনগণনায় আসা কর্মকর্তাদের সরকারি পরিচয়পত্র দেখার অধিকার সাধারণ মানুষের রয়েছে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারি আইডি কার্ড থাকবে, যা তারা দেখাতে বাধ্য।
গুরুত্বপূর্ণ হাইলাইটস
- ২০২৭ সালের জনগণনা হবে দুই ধাপে: House Listing ও Population Enumeration
- ১ অক্টোবর ২০২৬ থেকে শুরু পাহাড়ি অঞ্চলে, আর ১ মার্চ ২০২৭ থেকে বাকি দেশে
- এই বার ১৯৩১ সালের পর প্রথমবার জাতি-ভিত্তিক তথ্য নেওয়া হবে
- জনগণনায় তথ্য দিতে বাধ্য নাগরিক, না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে
- সরকারি কর্মীদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে, তারা তা দেখাতে বাধ্য
সর্বোপরি জনগণনার জাত বিতর্ক আবারও জোরালো হয়ে উঠেছে জাত গণনা কি এবং কিভাবে হবে এই নিয়েও থাকছে মানুষের মধ্যে চিন্তার ভাঁজ।